শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১০

শেয়ার বাজার-১৩ ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস, টেকনিকাল এনালাইসিস: সহযোগী না প্রতিদ্ধন্ধী ?

ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস (FA) ও টেকনিকাল এনালাইসিস (TA) শেয়ার মার্কেটে বিনীয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিত দুটি ডিসিশন সাপোর্ট টুল। শেয়ার বাজার নিয়ে আমি নিয়মিত লিখি সামুতে, তাই এ সম্পর্কিত অন্যান্য লেখকের লেখাও পড়ি নিয়মিত।

আজ সৌভাগ্যা ক্রমে পর পর ৩ টা লেখা পড়লাম, যা মূলত টেকনিকাল এনালাইসিস (TA) এর খারাপ ভাল দিকগুল নিয়ে লেখা হয়েছে। এ সম্পর্কিত নিজস্ব মতামত তুলে ধরাই আজকের লেখার মূল্য উপলক্ষ। তাহলে আসুন আগে দেখি FA,TA কি জিনিস-

ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস (FA): মূলত কম্পানির ফিনানসিয়াল ফান্ডামেন্টাল তথা লাভ-লোকশান/আয়-ব্যায়কে কেন্দ্র করেই এ ধরনের এনা লাইসিস করা হয়। আমার ব্লগে শেয়ার বাজার সম্পর্কিত সব লেখাই এ ধরনের এনালাইসিসের ভিত্তিতে লেখা। তাই পাঠেক মাত্রই জানেন কি ভাবে এই টেকনিক কাজ করে।

টেকনিকাল এনালাইসিস (TA): এটি একটি স্টেটিস্টিকাল টেকনিক যা মূলত বাজারে শেয়ারের মূল্য ও চাহিদার আনুপাতিক হার দ্বারা নিয়ন্ত্রীত। যেহেতু ব্লগার তৌফিক কামাল অলরেডি এটা নিয়ে আলাদা পোস্ট দিয়েছেন তাই পাঠকগন ঐ ব্লগ থেকেই বিস্তারিত জানুন। সময় সল্পতা ও লেখার আকার সীমিত রাখার জন্য বিস্তারিত আলোচনায় গেলাম না।

যারা ঐ পোস্টটি পড়েছেন তারা নিশ্চই অবাক হচ্ছেন কী সহজেই না গ্রাফ/চার্ট দেখে শেয়ার কেনা-বেচা করা যায়। সংক্ষেপে বললে সিসটেমটা এমন " ৫-৬/১০-১৫ দিনের এভারেজ মূল্য ও ট্রেড ভলিউমের চাইতে এখন কার মূল্য ও ভলিউম বেশী হলেই বাই আর তা কমতে শুরু করলেই সেল। "

টেকনিকটা যে কার্যকরী এ ব্যাপারে কোন সন্ধেহ নেই কিন্তু সমস্যা হল এর ব্যাবহারকারী। ছবি ত সবাই তুলতে পারে কিন্তু আমার আর একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের হাতে একই কেমেরা থাকলেও ছবির মান যে আকাশ-পাতাল হবে তা বলাই বাহুল্য। তবে আমি কিন্তু খারাপ ছবি তুলি না Click This Link :)

টেকনিকাল এনালাইসিস (TA) এর সীমাবদ্ধতা ও কুফল সম্পর্কে ব্লগার হা হা পোস্ট করেছেন আজ। আর এই পোস্টের কাউন্টার পোস্ট ও এসেছে একই দিনে। আমি বরং টেকনিকাল এনালাইসিস (TA) এর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আরো বিস্তারীত আলোচনা করি।

প্রথকেই কিছু প্রশ্ন করি, TA যারা বুঝেছেন তাদের জন্য

১। বর্তমান মূল্য ও ট্টেডিং ভলিউম গড় মূল্য ও গড় ট্টেডিং ভলিউমের চেয়ে বেশী হলেই শেয়ার কিনতে হবে। কেন এই বৃদ্ধি তা কি কেউ ভেবেছেন ?

২। ঠিক কতটুকু বেশী হলে/ কমলে আপনি ক্রয়-বিক্রয় শুরু করবেন ?


১ এর জবাবে অনেকেই বলবেন, দাম ও ক্রয়-বিক্রয় বৃদির পেছনের কারন চাহীদা বৃদ্ধি :)। তাদের জন্য সম্পূরক প্রশ্ন এই চাহিদা কে সৃষ্টি করল গেম্বাররা না কি কম্পানির আর্থিক ভিত্তি ?
২ এর জবাবে অনেকে হয়ত বলবেন, ১০-১৫% বৃদ্ধি পেলেই কিনতে হবে আবার ১০-১৫% কমে গেলে বিক্রি।

এবার আসুন একটা উদাহরন দেখি -

কম্পানি : ক (কোন কল্পিত কম্পানি নয়, নীতিমালার কারনে নাম ডিসক্লোজ করা গেল না )
কেটাগরি: IT Sector - মাত্র ৫ টি কম্পানি রয়েছে এই কেটাগরিতে সুতরাং তা মেনুপুলেট করা তুলনামূলক সহজ

Last Trade 50.00
52 Week's Range 26.5 - 88.9 - দাম বেশ ফ্লাকচুয়েট করে
Face Value 10.0
Market Lot 500
Market Category A - ভাল
Electronic Share Y - ভাল
Total no. of Securities 22853600
Share Percentage: Sponsor/Director 52.24 Govt.0 Institute 0 Foreign 0 Public 47.76
Total no. of Securities 22853600
মানে প্রায় ১,০৯,৬৭, ৯২৮ (Total no. of Securities*Share Percentage) টি শেয়ার ও ২১,৯৩৯ টি লট (১,০৯,৬৭, ৯২৮/৫০০) রয়েছে সাধারন বিনিয়োগকারীর হাতে। অর্থাৎ বেশ ভাল ভাবেই একে মেনুপুলেট করা সম্ভব।

এখন যদি কোন গ্রুপ সেই ২১,৯৩৯ টি লটের ২০% কম দামে কিনে এবং আরো ৫-৭% লট গড় মূল্যের চাইতে বেশী দামে কেনা শুরু করে (ধরুন ৫-২০ ট্রেডিং ডে এর মধ্যে কিনবে) তা হলে কিন্তু আমাদের এই টেকনিকাল এনালাইসিস (TA) ঠিকই বাই সিগনাল জেনারেট করবে। যদিও এই চাহিদা বৃদ্ধি মেনুপুলেটেড :)। দু:খজনক হলেও সত্য যে MACD গ্রাফ, Candle stick গ্রাফের সাধ্য নেই এই ম্যানুপুলেশনকে ইনডিকেট করার । তাই গ্রাফ দেখে আপনি যখন কিনতে শুরু করবেন, ঐ গ্রুপ তখন কেনা থামিয়ে দিয়ে হাতে থাকা ২০% লটগুল বিক্রি শুরু করবে আপনার কাছে।

আর যেহেতু গড় মূল্যের ১০-১৫% বেশি দামে আপনি শেয়ার কিনছেন সেহেতু আপনি বড় রিস্ক নিচ্ছেন কারন এই দাম কম্পানির আর্থিক ভিত্তি দ্বারা সাপোর্টেড নয়। ফলে শেষ দিকের বিনিয়োগকারীরা মিনিমাম ২০-২৫% ক্ষতির স্বীকার হবেন।


তাই টেকনিকাল এনালাইসিস (TA) ফলো করার আগে জাচাই করুন এই চাহীদা বৃদ্ধির কারন। যদি এটা কম্পানির আর্থিক লাভের পরিমান দ্বারা ট্রিগার্ড না হয়ে থাকে তবে শত হাত দূরে থাকুন ঐ শেয়ার থেকে (TA যতই বাই সিগনাল জেনারেট করুক না কেন :) )


আমার ব্যাক্তিগত মতামত হল টেকনিকাল এনালাইসিস ব্যাবহার করুন আপনার বিনীয়োগের সময়কাল কমিয়ে আনতে তবে অবশ্যই দেখুন এই চাহীদা বৃদ্ধি যেন কম্পানির আর্থিক ভিত্তি দ্বারা সাপোর্টেড হয়। তাহলে সেলিং সিগনাল মিস করলেও দুশ্চিন্তা নেই কারন আর্থিক ভিত্তি আপনাকে সুরক্ষা দেবে। আর কম্পানির আর্থিক ভিত্তি নিরুপনের জন্য ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস (FA) হল সব চেয়ে গ্রহনযোগ্য উপায়।

নতুন বিনিয়োগকারীদের প্রতি অনুরোধ, অন্ধ হয়ে TA এর পেছনে ছুটবেন না, আগে অ-আ শিখুন পড়ে ক-খ নইলে অল্প বিদ্যা ভায়ঙ্করী হবার সমুহ সম্ভাবনা আছে। আর যারা টেকনিকাল এনালাইসিস শেখাচ্ছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ ভাল দিকগুলর পাশাপাশি এর খারাপ দিকগুল ও বলুন। নতুন দেরকে সচেতন করুন অন্ধ অনুকরন করতে শিখিয়েন না। কি এবং কোন কারনে বাইং সিগনাল জেনারেট হল এবং কে আপনি তা ফোলো করছেন তাও বলুন। আর ব্লগার তৌফিক কামালকে উদ্দেশ্য করে বলছি-

আপনার ব্লগ ও ফেসবুক একাউন্ট দেখলাম; আপনি এমন সব স্পেকুলেটিভ তথ্যা ব্লগ ও ফেসবুকে দিচ্ছেন যা ডিএসইর আইনে নিষিদ্ধ। ইতিমধ্যেই অনেক ব্লগ, ফোরাম ও ওয়েব সাইট বন্ধ করে দিয়েছে রেব। ৬ মাস আগে ৩ জনকে গ্রেফতার ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। তাই যা করবেন আইন মেনেই করুন।


সূত্র

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন