শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১০

শেয়ার বাজার-৯ : প্রয়োজন ধৈর্য ও বিবেচনাবোধ

অবশেষে শেয়ার বাজারে শুরু হয়েছে কাঙ্খিত কারেকশন বা রি-এডজাস্টমেন্ট। অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ট বিনিয়োগকারীর কাছে এই পরতি বাজার অনাকাঙ্খিত হলেও যারা প্রকৃত বিনিয়োগকারী তাদের কাছে এই অবস্থা সাদরেই গৃহিত হচ্ছে, কারন গত মাস তিনেকের উর্ধগতির ফলে বাজার হয়ে পড়েছিল অতিমূল্যায়িত। ফলস্বরুপ বিনিয়োগ ঝুকি বেড়ে গিয়েছিল বহু গুনে। তাই সচেতন বিনিয়োগকারীরা হাত গুটিয়ে নিতে শুরু করেছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবে গত ২ মাসে আমি শুধু বিক্রিই করেছি; ২-১ টা ব্যতিক্রম ছাড়া কেনার চেষ্টা করিনি। পরিচিত অনেককেই ঠিক একই কাজ করতে শুনেছি এবং করতে বলেছি। আশা করি তারা এখন বুঝতে পারছেন কেন নতুন কিছু কিনতে নিরুৎসাহিত করেছিলাম।

মোটা দাগে আমাদের বাজারে ২ শ্রেনীর শেয়ার ক্রেতা রয়েছে - এখ দল শেয়ার বিনিয়োগকারী আর আরেক দল শেয়ার ব্যবসায়ি। বিনিয়োগ আর ব্যবসার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক তা অনেকেই বুঝতে অক্ষম।

বিনিয়োগকারী: বিনিয়োগকারী তারাই যারা কম্পানির আয়-ব্যায় অর্থাৎ লাভ-লোকসানের উপর ভিত্তি করে শেয়ার কেনে এবং বিক্রির জন্য আদর্শ সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। তাই পড়তি বাজার তাদের জন্য কেনার সময় আর উর্ধমূখী বাজার হল বিক্রির সময়। আর আমাদের শেয়ার বাজারের বেশির ভাগ কম্পানির বৎসর সমাপনী মাস যেহেতু ডিসেম্বর সেহে্যতু মার্চ-মে হল বিক্রির সময়। আবার অক্টবর-নভেম্বর মাসের মধ্যে যেহেতু কম্পানিগুল তাদের অর্ধবার্ষিক আয়ের হিসাব দিয়ে দেয় তাই এই সময়টা হল কেনার মৌসুম।

ব্যবসায়ি: এরা মূলত বাজারে বিভিন্ন গুজব ও হাইপ সৃষ্টি করে বিশেষ কোন শেয়ারের ভার্চুয়াল প্রাইস গেইন ঘটায় এবং এটা নিয়ে ব্যবসা করে। যেহেতু এই দাম বৃদ্ধির সাথে মূল কম্পানির আয় রোজগারের কোন সম্পর্ক নাই তাই এটা অনেকটা গ্যাস ভরা বেলুনের মত ফুলতেই থাকে কারন অজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা তখন এই কাতারে সামিল হয়ে দাম বারায়। আর পরিনতি স্বরুপ লাইনের শেষ প্রান্তে দাড়ান মানুষগুলর পকেট খালি হয়। এমনই একটা হাইপ (১০ টাকা ফেস ভ্যালু) গত ১ মাস শেয়ার বাজার চাঙ্গা রেখেছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে বাজার হয়ে পড়েছে সেচুরেটেড যার ভবিস্যাৎ একটাই পতল। বাতাস ছেড়ে দেয়া বেলুনের মত আরকি :)

তবে এই পতন অবসম্ভাবি হলেও বেশ আগে ভাগেই চলে এসছে। যার অন্যতম প্রধান কারন এবারের বাজেট। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না থাকা, কেপিটাল গেইনের উপর ১০% কর আরোপ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয়ের উপর টেক্স না কমানো - এগুলকে আপাত কারন মনে হচ্ছে অর্থাৎ এবারের বাজেটে শেরাব বাজার তথা এতে লিসটেড কম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন সুখবর নাই। আর যেহেতু বাজারের ডিভিডেন্ড দেয়ার মৌসুম শেষ তাই মন্দার এই আগাম আগমন।

তবে বাজেটে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের টেক্স ও টিআইএন এর বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তির ঘোষনা বাজারকে উর্ধমুখী করতে না পারলেও এর তড়িৎ পতন ঠেকিয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ি যাদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয়ের উপর টেক্স (৪০%) কমান না ই হয় তবে এই পতনে সাময়িক বিরোতি টানা সম্ভব নয়।

আবার ঐতিহ্য গত ভাবেই জুলাই-অক্টোবর হল ডিএসই'র ডাল পিরিয়ড। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জিপির লকইন উঠে যাওয়ার সময় সূচি। আগস্টের ৩য় সপ্তাহেই জিপির ৫% শেয়ারের লকইন উঠে যাবে মানে তখন বাজারে আসবে এখনকার সমপরিমান নতুন শেয়ার। যদি প্রিআইপিও পাওয়া কম্পানিগুল এই শেয়ার বিক্রির জন্য ছেড়ে দেয় তবে ঠিক কি ঘটবে আল্লাই জানে। আমি প্রেডিকশন করছি নিম্নের ২ টা ঘটনার যে কোন একটা ঘটবে-

১। জিপির দাম মেনুপুলেট করে বাড়ান হবে এবং এর পর নতুন শেয়ারগুল বেশি দামে বিক্রি করা হবে। ফল স্বরুপ আবার মার্কেট আপ হয়ে ১-২ মাস কন্টিনিও করে পুনরায় পতন।অর্থাত শেষ বিচারে কিছু নির্বোধ বিনিয়োগকারীর পকেট খালি ।

২। ধীর গতিতে শেয়ারগুলর বিক্রি শুরু হবে ফলে প্রি-আইপিও পাওয়া রাঘব বোয়ালরা কাঙ্খিত মুনাফা পাবে না। তবে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা খুব কম :(

আর আগের পোস্টে পতন থেকে বাচার উপায় নিয়ে কথা বলেছিলাম। আসা করি ইতিমধ্যেই সবাই পতল মোকাবেলার পূর্বপ্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন :)। আমি কিন্তু বেশ আগেই প্রস্তুত, ইতি মধ্যেই ৬০% শেয়ার কেশ করে ফেলেছি এখন শুধু কম দামে নতুন শেয়ার পকেটস্থ করার অপেক্ষা। উপভোগ্য হোক আপনাদের সকলের পড়তি বাজারে কেনা-কাটা।



সূত্র

২টি মন্তব্য: