শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১০

শেয়ার বাজার-১০: এবারের বাজেট যেমন হল

টাইটেলে শেয়ার বাজার কথাটা থাকলেও এটা আসলে প্রায় পুরো বাজেট নিয়ে আমার বিশ্লেষন। আবার শেয়ার বাজার নিয়ে যেহেতু লিখি তাই এটা নিয়েও কথা বলতে হবে; সুতরাং আলাদা করে ২ টা পোস্ট না দিয়ে একত্রে দিলাম।

১০ ই জুন বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল বাজেট পেশ করেছেন আমাদের অর্থমন্ত্রী আ মা আ মুহিত(যদিও আমি ডাকি কার্টুন মন্ত্রী; ওনাকে দেখলেই আমার হাসি :) পায়। তবে তিনি তার দায়িত্বে অন্য অনেক হাক-ডাক ওয়ালা হাম্বা মন্ত্রীর চাইতে ভাল করছেন)

জ্বালানী: এবারের বাজেটের বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক। বেশ দেরিতে হলেও দেশের নীতিনির্ধরক মহল অবশেষে বুঝতে পেরেছেন যে বাংলাদেশের উন্নতির প্রধান অন্তরায় এখন জ্বালানী তথা বিদ্যুত সংকট । তাই এবারের বাজেটে রেকর্ড পরিমান বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে জ্বালানি খাতে যা গেল বাজেটের তুলনায় ৬১ সতাংশ বেশি। এখন মূল কাজ হল বাস্তবায়ন; সব ঠিক মত করতে পারলে ২০১২ সাল নাগাদ উৎপাদন ও চাহীদার ব্যবধান ঘুচে যাবে। অর্থাৎ লোড শেডিং মুক্ত হবে বাংলাদেশ। শুধু এই একটি কাজ করতে পারলেই এদেশের মানুষ বিশেষ ভাবে মনে রাখবে মহাজোট সরকারকে। আশা করি সরকারও তা অনুধাবন করে দ্রুত কাজ করবে। বিশাল বরাদ্ধ দিয়ে তারা ভাল ভাবে যাত্রা শুরু করেছে, প্রর্থনা করি তারা সফল হোক।

শিক্ষা/সাস্থ/ সমাজ কল্যান : গরিবের নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা এখানে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্ধ নিতান্তই কম। আবার এই বরাদ্ধের সিংহ ভাগই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাবদ খরচ হবে, তাই চোখে পরার মত উন্নতি করার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ এই বাজেটে নেই। তবে মুক্তোযোদ্ধা ও ওন্যান্য কল্যানমূলক ভাতা বৃদ্ধি প্রশংসাযোগ্য।

কৃষি/ শিল্প: আওয়ামিলীগ সরকার বরাবরই তলনামূলক ভাবে অন্য সরকারের চাইতে বেশি কৃষি বান্ধব এবং তাদের সবচেয়ে বেশি সাফল্য ও এখানে, এটা সম্ভবত লীগের ঘোড়তর নিন্দুক ব্যাক্তি ও স্বিকার করবে। এর জন্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাজ দৃষ্টান্তমূলক এবং কোন প্রসংশাই এর জন্য যথেষ্ট নয়। তবে শিল্পের অবস্থা হযবরল। গেল বছরের করুন অবস্থা মন্ত্রী নিজেই স্বিকার করেছেন, এবারের বাজেটেও পূর্বাভাস তেমন ভাল নয়। তাই ভিসন ২০২১ এর '৪০% শিল্পনির্ভর জিডিপি' কে অলিক সপ্ন বলেই মনে হচ্ছে।

প্রবাসী কল্যান: অর্থমন্ত্রী আবার ও স্বীকার করলেন যে বাংলাদেশের অর্থনীতির অস্কিজেন হল প্রবাসী আয় যা গেল মন্দায় ও এদেশের তেমন ক্ষতি হতে দেয় নি। তবে নতুন নতুন শ্রমবাজার খোঁজার ব্যর্থতা ও বর্তমান বাজার সংকুচিত হবার কথা মন্ত্রী এড়িয়েছেন রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও ফরেন কারেন্সি রিজার্ভের পরিসংখ্যান দিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত শ্রম রফতানীর ধারার নিম্ন গতি ও শিল্প কাচামাল ও মেশিনারীর আমদানী থমকে যাওয়াই যে এই বিশাল ফরেন কারেন্সি রিজার্ভের নিয়ামক তা তিনি ইনডাইরেক্টলি স্বীকার করেছেন। তাই এই অবস্থার আশু উন্নতি কাম্য।

যোগাযোগ: বলতে পারেন গরিবের ঘোড়া রোগ আরকি! পদ্মা সেতু-১, পদ্মা সেতু-২, নতুন বিমান বন্দর, পাতাল রেল , এলিভেটেড রেল, ফ্লাই ওভারের ছড়া-ছড়ি এবারের বাজেটে। নতুন বিমান বন্দর এখন বাংলাদেশের জন্য কতটুকু প্রয়োজন তা একটা কোটি টাকার প্রশ্ন অখচ সাস্থ ও সমাজ কল্যান খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ নেই। আর ঢকার যানজট রোধে পাতাল রেল , এলিভেটেড রেল, ফ্লাই ওভার ইত্যাদি সব একসাথে না করে এই তিনটি মেগা প্রজেক্টের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন, যেন কম সময় ও অর্থ ব্যায় করে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু এধরনের কোন সমন্বীত প্রচেস্টা সম্পূর্ন অনুপস্থিত এই বাজেটে। অন্য দিকে যানজট রোধে নতুন-পুরাতন গাড়ি আমদানীর উপর টেস্ক বেড়েছে ফলে ১৬০০ সিসির নিচে সব প্রাইভেট কারের দাম বেড়েছে কিন্তু ১৬০০১ থেকে ২০০০ সিসির দাম কমেছে যা অযৌক্তিক ! নিম্ন-মধ্যবিত্বের সুযোগ কেড়ে নিয়ে উচ্চ বিত্তকে সুবিধা দেয়ার আরো একটি খারাপ নজির এই সরকারও রাখল। এমনকি পাবলিক বাস ও ট্রাকের মত যানবাহনের দাম ও বেড়েছে। মূলত বাস ও ট্রাক বাংলাদেশেয় এসেম্বল করা হয় তাই স্পিটেড বাস-ট্রাক আমদানীর টেক্স বাড়িয়ে সরকার মূলত রেডিমেট বাস-ট্রাক আামদানীকে উৎসাহিত করল। যা স্থানিয় এসেমব্লিং শিল্পের জন্য খারাপ খবর।

তথ্য-প্রযুক্তি: নিজে এই সেক্টের লোক হওয়ায় বাড়তি আগ্রহ নিয়েই চোখ রেখেছিলাম এই অংশে। তবে এবারও হতাশ। আমাদের তথ্য-প্রযুক্তি এখনও নীতিমালা তৈরীর বেড়া-জালেই বন্দি, তাই লেখার বিশেষ কিছু নেই :(। তবে ২য় অপটিকাল মেরিন কেবল কানেশনের খবর এই হতাশা কিনচিত কমিয়েছে।

শেয়ার বাজার: আমার শেয়ার বাগার নিয়ে লেখার নিয়মিত পাঠকরা সম্ভবত এতক্ষনে অনেক বিরক্ত হয়েছেন 'বিশ্লেষণের আতেলীয় তত্ত কথা ' পড়ে তাই আগে ভাল খবরগুল দেই । যোগাযোগ ও জ্বালানী খাতের অনেকগুল মেগা প্রজেক্ট পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে হবে এ বছর। তাই শেয়ার বাজার থেকে বেশ বড় অংকের মূলধন যোগানের চেষ্টা হতে পারে (গেল বছরে কিন্তু কিছুই হয়নি)। এছাড়া সরকারি ২৬ টি কম্পানির শেয়ার ছারের ঘোষনা আবার ও দিলেন অর্থমন্ত্রী। আগামি বছর মূলত তেল-বিদ্যুত তথা জ্বালানী খাতে নতুন নতুন কম্পানির আগমন ও উৎথান ঘটতে পারে। এবার খারাপ খবর :) । প্রথমেই ইনিস্টিটিউশনাল বিনিয়োগকারীদের কেপিটার গেইনের উপর ১০% টেক্স আরোপ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে এবারই প্রথম। ১০% টেক্সের ভয়ে যদি ইনিস্টিটিউশনাল বিনিয়োগকারীরা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে তবে তা বাজারের জন্য খারাপ খবর। এমনিতেই আমাদের বাজারে গেম্বারদের বেশ আনাগোনা, তাই বড় ইনিস্টিটিউশনাল বিনিয়োগকারীরা নিস্ক্রিয় হয়ে গেলে এদের দৌরাত্ব আরো বাড়বে যা শেষ বিচারে বাজারকে আরো অধিক মাত্রায় অস্থীতিশীল করে তুলবে। এছাড়া ট্রেডিং হাউডের উপর টেক্স বৃদ্ধির ফলে সাধারন বিনিয়োগকারীদের ব্যয় বাড়বে। এখন ট্রেডিং হাউজগুল ১০০০ টাকার লেনদেনে প্রকার ভেদে ৫-৭ টাকা চর্জ করে; নতুন হিসেবে এটা ১২-১৫ টাকায় চলে আসবে। তাই সরকারের উচিত উভয় টেস্টের অংকই কমান অন্তত পরীক্ষামূলক ভাবে (আমি টেক্স শূন্য করার পক্ষপাতি নই, অন্য ব্যবসায়িরা টেক্স দিলে শেরার ব্যবসায়িদেরও দিতে হবে। আমরা টেস্ক দিতে গড়িমসি করব আবার চাইব সরকার সব কিছুর উন্নয়ন করবে; এই চিন্তা অযৌক্তিক। আমরা টাকা না দিলে সরকার টাকা পারে কোথায় ?)। তবে গতকাল ও আজ বাজারের সাভাবিক আচরন কিন্তু আমার শংকাগুলকে তেমন পাত্তা দেয়নি। দেখা যাক আগামী ২ সপ্তাহ বাজার কেমন যায়, এর পরই রিয়েকশনের মাত্রা টেড় পাওয়া যাবে।


সংক্ষেপে বলা যায় এই বাজেট তেমন আহামরি (জ্বালানী ও যোগাযোগ ছাড়া ) কিছু না হলেও খারাপ নয়। আমাদের মত গরিব রাষ্ট্রের বাজেট এর চেয়ে খুব এখটা ভাল হওয়া ও সম্ভব নয়। তবে জ্বালানী ও যোগাযোগ খাতের উচ্চাভিলাসি মেগা প্রজেক্টগুলর সাফল্য-ব্যার্থতা দিয়েই এই বাজেটকে মূল্যায়ন করা হবে আগামীতে; তাই সরকারের উচিত এই দুই খাতে বিশেষ করে জ্বালানী খাতে বিশেষ নজড় দেয়া। কায়মনো বাক্যে প্রর্থনা করি লীগ সরকার অন্তর্ত এই ক্ষেত্রে সফল হোক। আমরা যে যেই রাজনৈতিক মত ধারারই হই না কেন, লীগ সরকারের এই একটি সাফল্য আমরা দল-মত নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশী মিলিত ভাবে চাই। প্রত্যাশা করি তারা সফল হবে। বড় বড় কথা আর প্রতিশ্রুতির তুফান থামিয়ে এবার তাদের করে দেখাবার পালা। মুখের চাইতে কর্মের মাধ্যমেই তারা তাদের সমালোচনার জবাব দিক। ব্যার্থ হলে ভিসন ২০২১ এর সপ্ন শুধু শেখ হাসিনার অলিক সপ্ন হিসেবেই আগামী প্রজন্মের কাছে চিন্হীত হবে।


সূত্র

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন