কিন্তু অর্থমন্ত্রী ও এসইসির ইচ্ছায় তা ১০ টাকায় নির্ধারনের পক্ষে মতামত আসা শুরু হয়। এর ফলে বাজারের অতিমূল্যায়িত শেয়ারগুলোর দাম সাধারন ক্ষুদ্র বিনীয়োগকারিদের হাতের নাগালে আসবে বলে মত প্রকাশ করা হয়। তাদের এই যুক্তির যেমন বাস্তব ভিত্তি রয়েছে তেমন উচ্চ মূল্যায়িত বাজারকে নিয়ত্রনের জন্য অন্যান্য শেয়ার বাজারেও একই প্রকৃয়া ব্যাবহৃত হয়েছে অতিতে।
ঘটনা এই পর্যন্ত আশা ব্যান্জ্ঞক হলেও গুজবসৃষ্টিকারী জুয়ারিদের সুদৃষ্টি (!) পড়ায় অতিদ্রুতই এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক কান-কানি এবং 'ফেস ভ্যালু ১০ টাকা হলে ব্যাপক লাভ হবে' এই গুজবের কারনে হু-হু করে দাম বাড়া শুরু হয় ১০০ টাকা মূল্য মানের শেয়ারসমুহের। ঘটনার ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা টের পেয়ে এসইসি 'কোন কম্পানি যেন ফেস ভ্যালু পরিবর্তন না করে' এই মর্মে রুল ইশু করে। কিন্তু সরিসায় থাকা ভুতের মতই এসইসি কিছু কম্পানিকে ভ্যালু পরিবর্তনের অনুমতি দিলেও অন্যকিছু কম্পানিকে কারন দর্শানোর নোটিশ পাঠায়।
এই দিকে ১০০ টাকার ফেস ভ্যালুর শেয়ারসমুহের দাম বাড়তেই থাকে। অপরদিনে কিছু কিছু কম্পানিও তাদের ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের ঘোষনা দিয়ে মাঠ গরম রাখে। এর পেছনে কৃয়াশীল সেই বিশেষ চক্রের সপ্ন পুরন করতেই যেন তিন দিন আগে জারি হল অর্থমন্ত্রনালয়ের নির্দেশ - 'যে কোন কম্পানি চাইলেই নিজেদের ফেস ভ্যালু বদলাতে পারবে'।
আসুন দেখি শেয়ার এর ফেস ভ্যালু ১০০ টাকা থেকে ১০ টাকায় নামিয়ে আনলে কি কি ঘটবে
শেয়ার - ক
ফেস ভ্যালু- ১০০ টাকা
মোট শেয়ার- ১০,০০০
শেয়ার প্রতি আয়- ৫০ টাকা
বাজার মূল্য - ৬০০ টাকা
লট - ৫০
এখন এর ফেস ভ্যালু ১০ টাকায় নামালে যা ঘটবে
শেয়ার - ক
ফেস ভ্যালু- ১০ টাকা
মোট শেয়ার- ১,০০,০০০
শেয়ার প্রতি আয়- ৫ টাকা
বাজার মূল্য - ৬০ টাকা (ঐকিক নিয়মে হওয়া উচিত)
লট - ৫০ (৫০ টি হতে পারে আবার ৫০০ টি ও হতে পারে)
এর মানে দাড়াচ্ছে ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের সাথে কম্পানির অর্থিক আয় বাড়া/কমার কোন সম্পর্ক নেই (শেয়ার প্রতি আয়)। সম্পর্ক আছে বাজার মূল্য পরিবর্তনের। গুজব সৃষ্টিকারীদের যুক্তি হল এত ভাল শেয়ার নিশ্বই ৬০ টাকায় বিক্রি হবে না; হবে আরো বেশি দামে এমনটি তা ৮০-৯০ ছাড়িয়ে ১৩০-১৫০ এর ঘরেও পৌছে যেতে পারে। আর এই বিপুল লেভের মোহে নতুন ও অগ্য বিনিয়োগকারীরাও ছুটছে পাগলা ঘোড়ার মত যার প্রকাশ ঘটেছে গত কাল রেকর্ড পরিমান ২০০০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে।
খুব ছোট হলেও একই ঘটনা ঘটেছিল সম্ভবত ২০০৭ এর শেষ দিকে। ইসলামি ব্যাংক তাদের ১০০০ টাকা ফেস ভ্যালুর শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০০ টাকায় এবং লট ১ টি থেকে ১০ টি তে পরিবর্তনের ঘোষনা দেয়। গুজব ও প্রত্যাশার চাপে ৩-৪ দিনেই ৫৭০০-৫৭৩০ মূল্যের শেয়ারের দাম ৮০০০ টাকায় পৌছে। রেকর্ড ডেটের পর যখন বিভক্তিকরন শেষ হল তখন সেই শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম উঠল ৬৫০ টাকা ! যা ১ মাসেই ৬০০ নিচে নেমে যায়

হ্যা ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের কারনে ৫৭০ টাকার শেয়ার ৬০০ টাকায় বিক্রী হলেও তার স্থায়ীত্ব ছিল ১ মাস। সুতরাং যারা ৮০০০ টাকায় শেয়ার কিনেছিল তারা শেয়ার প্রতি লস দিল ৮০০-৬০০ =২০০ টাকা আর বিভক্তিকরনের পর পর যার শেয়ার কিনল তারা হারাল ৬৫০-৫৯০ = ৬০ টাকা।
এই মূল্য পতনের প্রধান কারন হল তখন শেয়ারটির আর্থিক ভিত্তি এতটা ভাল ছিল না যে এর দাম ৬০০ এর উপরে থাকবে যদিও এই শেয়ারটি ডিএসইর অন্যতম স্ট্রং ফান্ডামেন্টাল শেয়ারগুলর অন্যতম ছিল।
তাই এখন যারা গুজবের পেছনে ছুটছে অতি শিঘ্রই তাদেরকে শাপলা চত্তরে বা ডিএসইর সামনে মূল্যপতনের জন্য মিছিল করতে হবে। বিনিয়োগ যেহেতু আপনার সুতরাং লাভ-লোকসান দুটই আপনার। সুতরাং এখনই ভাবুন সাবধান হবেন, না কি কষ্টার্জিত টাকা হারিয়ে রাস্তা-ঘাটে আন্দলোন ভাংচুর করে হতাশা প্রকাশ করবেন।
http://www.somewhereinblog.net/blog/quest/29154462সূত্র
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন